মোহাম্মদ জহিরুল হক শাকিল
হবিগঞ্জ সদর
সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ জহিরুল হক শাকিলের জন্ম ১৯৭৬ সালে হবিগঞ্জ পৌরসভার তেঘরিয়ায়। ১৯৮৬ সাল থেকে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন শহরের শায়েস্তানগর আবাসিক এলাকায়। পিতা হবিগঞ্জ বিতর্ক পরিষদের সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষক আলহাজ্ব মোঃ জবরু মিয়া ও মাতা আলহাজ্ব মোছাম্মৎ রাবেয়া খাতুন। জহিরুল হক শাকিল ১৯৯৩ সালে শহরের জে কে এন্ড এইচ কে হাইস্কুল থেকে স্টার মার্ক নিয়ে সাধারন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে এসএসসি এবং ১৯৯৫ সালে সরকারী বৃন্দাবন কলেজ থেকে হবিগঞ্জ জেলায় সর্বোচ্চ নাম্বার নিয়ে মানবিক বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাশ করেন। পরে ভর্তি হন সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ এন্ড পাবলিক এ্যাফেয়ার্স বিভাগে। এ বিভাগ থেকে ১৯৯৮ সালে (পরীক্ষা অনুষ্টিত ২০০০ সাল) এ গ্রেড ও ডিস্টিংশন নিয়ে রেকর্ড নাম্বার সহ বিএসএস অনার্স ডিগ্রী লাভ করেন। বিএসএস পরীক্ষায় তার প্রাপ্ত সিজিপিএ ছিল সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এজন্য তিনি রাষ্ট্রপতি তথা চ্যান্সেলর গোল্ড মেডেল লাভ করেন। একই সাথে স্কুল অব সোস্যাল সায়েন্সে সর্বোচ্চ সিজিপিএ’র জন্য ভাইস চ্যান্সেলর মেডেল ও তার বিভাগে সর্বোচ্চ সিজিপিএ প্রাপ্তির জন্য ইউনিভার্সিটি বুক মেডেল লাভ করেন। পরবর্তিতে একই বিভাগ থেকে ১৯৯৯ সালে (পরীক্ষা অনুষ্টিত ২০০২ সাল) ডিস্টিংশনসহ এ গ্রেড নিয়ে এমএসএস ডিগ্রী লাভ করেন। উক্ত শিক্ষাবর্ষে স্কুল অব সোস্যাল সায়েন্সে সর্বোচ্চ সিজিপিএ’র জন্য ভাইস চ্যান্সেলর মেডেল ও তার বিভাগে সর্বোচ্চ সিজিপিএ প্রাপ্তির জন্য ইউনিভার্সিটি বুক মেডেল লাভ করেন। এমএসএস পর্যায়ে ‘বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীর ক্ষমতায়নঃ সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সম্পাদিত থিসিস পরবর্তীতে ঢাকার গতিধারা থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। জহিরুল হক শাকিল পলিটিক্যাল স্টাডিজ এন্ড পাবলিক এ্যাফেয়ার্স বিভাগের একমাত্র ছাত্র যিনি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সকল পরীক্ষায় প্রথম হন। সামাজিক বিজ্ঞান তথা পলিটিক্স ও এডমিনিস্ট্রেশন এর মতো কোনো তত্বীয় বিষয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স উভয় পরীক্ষায় ডিস্টিংশন লাভ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় তথা বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার প্রেক্ষাপটে বিরল কৃতিত্বের স্বাক্ষর। তার প্রাপ্ত সিজিপিএ আজ অবধি শাবিপ্রবিতে রেকর্ড। শাবিপ্রবি থেকে শিক্ষা সম্পন্ন করে ২০০২ সালের মে থেকে ২০০৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তিনি সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটি’র ব্যবসা প্রশাসন বিভাগে প্রভাষক ও একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০০৪ সালের এপ্রিলে শাবিপ্রবি’র পলিটিক্যাল স্টাডিজ এন্ড পাবলিক এডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন ।
জহিরুল হক শাকিল ২০০৯ সালে শাবিপ্রবি’র প্রথম কোন ছাত্র হিসেবে যুক্তরাজ্যে কমনওয়েলথ স্কলারশীপ লাভ করেন। উক্ত স্কলারশীপের অধীনে ইংল্যান্ডের লিডস বেকেট ইউনিভার্সিটি’র এপ্লাইড গ্লোবাল ইথিকস থেকে পিস এন্ড ডেভেলপমেন্টে মেরিট এওয়ার্ডসহ মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। লিডসে অধ্যয়নকালীন তার থিসিস ‘প্রবলেমস অব ডেমোক্রেটাইজেশন ইন বাংলাদেশ’ জার্মানী থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। ২০১২ সালে দ্বিতীয়বারের মতো কমনওয়েলথ স্কলারশীপ পেয়ে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে পিএইচডি করছেন। কোন ব্যক্তির দু’বার কমনওয়েলথ স্কলারশীপ লাভ বাংলাদেশ তথা যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ স্কলারশীপ কমিশনের ইতিহাসে এক বিরল কৃতিত্বের স্বাক্ষর। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন ছাড়াও দেশী-বিদেশী জার্নালে জহিরুল হক শাকিলের এ যাবত ২৫ টি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রকাশিত দুটি গ্রন্থ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পঠিত হয়। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড, ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজের ইন্সটিটিউট অব সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ ও সুইডেনের লুন্ড ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্টিত কনফারেন্সে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যূতে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় লেখালেখি করেন।
জহিরুল হক শাকিল ছাত্রজীবনে খেলাধুলা, সংস্কৃতি, স্কাউটিং ও বিএনসিসিতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন। তিনি জে কে এন্ড এইচ কে হাইস্কুল স্কাউটদলের লিডার, সরকারী বৃন্দাবন কলেজের সিনিয়র রোভারমেট ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডট কোর সরকারী বৃন্দাবন কলেজ প্লাটুনের ক্যাডেট ছিলেন। তিনি ১৯৯৩ সালে চতুর্দশ চট্টগ্রাম আঞ্চলিক স্কাউট সমাবেশে জে কে এন্ড এইচ কে হাইস্কুল স্কাউট দলের ও ১৯৯৫ সালে চতুর্দশ জাতীয় রোভার মুটে সরকারী বৃন্দাবন কলেজ রোভার দলের নেতৃত্ব দেন। কমনওয়েলথ স্কলারশীপ এলামনাই এসোসিয়েশন উইকে ও লিডস বেকেট ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশনের সদস্য জহিরুল হক শাকিল হবিগঞ্জ জীবন সংকেত নাট্যগোষ্টীর নির্বাহী সদস্য, সিলেট সন্ধানী নাট্যচক্র ও বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা হবিগঞ্জ জেলা শাখার যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব ইউনেস্কো ক্লাব ইন বাংলাদেশ এর হবিগঞ্জ জেলা শাখার প্রেসিডেন্ট ও হবিগঞ্জ জার্নালিস্ট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের প্রতিষ্টাতা সদস্য। হবিগঞ্জ থেকে প্রকাশিত দৈনিক খোয়াই’র সাবেক স্টাফ রিপোর্টার জহিরুল হক শাকিল বর্তমানে পত্রিকাটির বিশেষ প্রতিনিধি। তিনি বৃন্দাবন কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত যুগ্ম-সাময়িকী ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে কলেজ বার্ষিকী ‘উদয়াচল’ সম্পাদনা করেন। তিনি বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ পলিটিক্যাল সায়েন্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপা, হবিগঞ্জ নজরুল একাডেমি ও সিলেটস্থ হবিগঞ্জ সমিতির আজীবন সদস্য। তিনি শাবিপ্রবিতে ২য় ছাত্র হল (বর্তমান বঙ্গবন্ধু হল) এর সহকারী প্রভোস্ট ও থিয়েটার সাস্টের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের একজন সংগঠক জহিরুল হক শাকিল ২০১২ সালের জানুয়ারীতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, বাংলাদেশ এনভায়রনমেন্ট নেটওয়ার্ক ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌথ উদ্যাগে এবং সিলেট মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি ও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্টিত ‘আদিবাসী জনগোষ্টী ও সিলেটের পরিবেশ’ শীর্ষক জাতীয় কনভেনশনের সদস্য সচিব ছিলেন। তিনদিন ব্যাপী অনুষ্টিত এ সম্মেলনের ঘোষনাপত্র সিলেটের প্রান্তিক জনগোষ্টী ও বিপন্ন পরিবেশ রক্ষায় একটি রূপরেখা হিসেবে কাজ করছে। যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি সিলেট তথা হবিগঞ্জ জেলার সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাপক জনমত গঠন করেন ও সাংগঠনিক তৎপড়তা চালান। যুক্তরাজ্যে সিলেট বিভাগ তথা বাংলাদেশের নদ-নদী ও পরিবেশ রক্ষায় একটি প্লাটফর্ম তৈরীতে লন্ডন ওয়াটার কিপার এলায়েন্স ইউএসএ, ওয়াটার কিপার ও বাংলাদেশ ওয়াটার কিপার এর সাথে তিনি নিরলসভাবে কাজ করছেন।
৩ ভাই ২ বোনের মধ্যে সবার বড় জহিরুল হক শাকিলের ছোট বোন আফিয়া খাতুন হবিগঞ্জ আলেয়া জাহির কলেজের দর্শন বিভাগের প্রভাষক, ছোট ভাই মোঃ ছায়েদুল হক ঢাকা ভাসানটেক সরকারী কলেজের ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক ও অপর ছোটভাই মোঃ নূরুল হক কবির দৈনিক খোয়াই পত্রিকার সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার। এছাড়া তার কনিষ্ঠ বোন আয়েশা খাতুন হবিগঞ্জ আলেয়া জাহির কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত। তার স্ত্রী তাজমিনা সুলতানা লন্ডন মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ইনফরমেশন সিস্টেমে বিএসসি ও সিলেট মেট্রোপলিটান ইউনিভার্সিটি থেকে মার্কেটিং এ এমবিএ ডিগ্রী লাভ করেন। বর্তমানে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে একটি প্রতিষ্টানে কর্মরত তাজমিনা সুলতানা সিলেটের একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র এক্সজিকিউটিভ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।