শাহ এ এস এম কিবরিয়া
জন্ম-মৃত্যু : ১৯৩১-২০০৫

স্কুল জীবনে হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে মাস্টার্স করা পর্যন্ত আজীবন প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হওয়া শাহ এ এস এম কিবরিয়া পাকিস্তান সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস পরিক্ষায়ও  প্রথম স্থান লাভ করতে সক্ষম হন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের নবগঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মহাপরিচালক ও পরে সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন। এ ছাড়া তিনি জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। শাহ এ এম এস কিবরিয়া ১৯৩১খ্রি. ১ মে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার জালালশাপ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৭ খ্রিঃ হবিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হতে প্রথম বিভাগে মেট্রিক ও ১৯৪৯ খ্রি. সিলেট এমসি কলেজ হতে প্রথম বিভাগে আইএ পাশ করেন । আইএ পরীক্ষায় তিনি সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরে তিনি ১৯৫২- ১৯৫৩ খ্রি. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতিতে যথাক্রমে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন । উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। ১৯৫৪ খ্রিঃ পাকিস্তান সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিসেস পরীক্ষায়ও প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি পাকিস্তান সরকারের পররাষ্ট্র সার্ভিসে যোগ দিয়ে বোস্টনস্থ ফ্লেচার স্কুল অব ল এন্ড ডিপ্লোমেসি এবং লন্ডনস্থ ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৫৭ হতে ১৯৭০ খ্রি. পর্যন্ত তিনি কায়রো, কলকাতা, জাকার্তা, নিউইয়র্ক, ইসলামাবাদ, ওয়াশিংটনে কুটনীতিক এর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭২ খ্রি. তিনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশের নবগঠিত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ও পরে সচিব পদে পদোন্নতি লাভ করেন । ১৯৭৩খ্রি. তিনি অষ্ট্রেলিয়া, ফিজি ও নিউজিল্যান্ডে হাইকমিশনার নিযুক্ত হন। হবিগঞ্জের গর্ব শাহ. এ. এম. এস. কিবরিয়া সার্কের ধারণা সম্বলিত মূল দলিল প্রণয়ন করেন এবং ১৯৮১খ্রি. তিনি জাতিসংঘের উপ-মহাসচিবের পদমর্যদায় এসকাপের নির্বাহী সচিব নিযুক্ত হন। তিনি ১৯৮৭ হতে ১৯৯২খ্রি. পর্যন্ত কম্বোডিয়ায় জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯২খ্রি. দেশে ফিরে তিনি আওয়ামীলীগে যোগদান করেন এবং দলের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯৯৪ সনে শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ও ১৯৯৬ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। পরে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় গেলে কিবরিয়াকে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০১খ্রি. ১ অক্টোবরের নির্বাচনে তিনি হবিগঞ্জ-৩(সদর- লাখাই) আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ’৫২-র ভাষা আন্দোলন  এবং ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধেও সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ২০০৫খ্রি. তারিখের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ জেলার বৈদ্যের বাজারে এক জনসেবায় বক্তৃতা শেষে আততায়ীদের গ্রেনেড হামলায় মৃত্যু বরণ করেন এ ক্ষণজম্মা পুরুষ।