সিরাজুল হোসেন খান
জন্ম-মৃত্যু : ১৯২৬-২০০৭

সিরাজুল হোসেন খান ( ১৭ জুলাই ১৯২৬ – ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৭) বাংলাদেশর জাতীয় পার্টির রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি তথ্য, শ্রম ও কর্মসংস্থান, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি হবিগঞ্জ-২ আসন থেকে ১৯৮৬ সালে জাতীয় পার্টি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। জন্ম ও পারিবারিক জীবন সিরাজুল হোসেন খানের জন্ম ১৭ জুলাই ১৯২৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব বাংলার সিলেটের হবিগঞ্জের বানিয়াচং এ (বর্তমান বাংলাদেশ) বিখ্যাত রাজনৈতিক পরিবারে। ১৯৫০ সালে তিনি এমএ পাশ করেন। রাজনৈতিক ও কর্মজীবন সিরাজুল হোসেন খান এরশাদ সরকারের সময় তথ্য মন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার সহ বিভিন্ন সংবাদপত্রের সাথে জড়িত ছিলেন। দৈনিক পাকিস্তান অবজারভারের সহ সম্পাদক, পাকিস্তান টাইমসের ঢাকা সংবাদদাতা ছিলেন। ১৯৬৭-১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সম্পৃক্ততার কারণে দুইবারে প্রায় ১৪ মাস কারাভোগ করেন। তিনি নিউজ এজেন্সী এনা, ইতার তাস, ভারতের ইউ এন আইয়ের সাথে কাজ করেন। মৃত্যু- সিরাজুল হোসেন খান ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ সালে মারা যান। সমাজ প্রগতির এগিয়ে চলার মিছিলে সিরাজুল হোসেন খান এক সংগ্রামী নাম। ২০০৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বানিয়াচংয়ের এড়ালিয়া ময়দানে হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছিল তাদের প্রিয় নেতাকে একনজর দেখতে। মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হোসেন খানকে গার্ড অব অনার দিয়ে বাংলাদেশের পতাকা মোড়ানো কফিনে অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছিল বানিয়াচংবাসী। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ের এক অকুতোভয় সংগ্রামী নেতা সিরাজুল হোসেন খান। ১৯২৬ সালের ১৭ জুলাই হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে এক রাজনৈতিক পরিবারে তার জন্ম। তার পরিবার বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশ নেন। সিরাজুল হোসেন খানের পিতা আবুল হোসেন খান ব্রিটিশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯২০-২২ সালে অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে ১ বছরেরও অধিককাল কারাবরণ করেন। জেলেই পিতা আবুল হোসেন খানের সাথে পরিচয় হয় মওলানা ভাসানীর। বানিয়াচংয়ের গ্রামের বাড়িতে মওলানা ভাসানী বিভিন্ন সময় গিয়েছেন। পিতার সান্নিধ্যেই সিরাজুল হোসেন খান মওলানা ভাসানীর ঘনিষ্ঠ সাহচর্য লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি দিনাজপুরের নঈমুদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে ইস্ট পাকিস্তান মুসলিম স্টুডেন্টস লীগের প্রথম কেন্দ্রীয় অ্যাডহক কমিটি গঠিত হয়। এই অ্যাডহক কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন জনাব সিরাজুল হোসেন খান। এই মুসলিম স্টুডেন্টস লীগ ১৯৪৯ সালে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করে। এ সময় খুবই সক্রিয় ছিলেন সিরাজুল হোসেন খান। ভাষা আন্দোলনেও অংশ নেন তিনি। ১৯৪৯ সালে এম এ ক্লাসে অধ্যয়নরত অবস্থায় তিনি ইংরেজি দৈনিক পাকিস্তান অবজার্ভার (পরবর্তীতে বাংলাদেশ অবজার্ভার) এর সহ-সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতা পেশায় যোগ দেন। তখন থেকেই তিনি প্রগতিশীল রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত হন। ১৯৫১ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। অ্যাসিস্ট্যান্ট ডাইরেক্টর, পাবলিসিটি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। আসলে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণে হয়তো তিনি দ্বিধায় ছিলেন। এ সময় তিনি দৈনিক পাকিস্তান টাইমসের (লাহোর) ঢাকা করেসপন্ডেন্ট ও ব্যুরো চিফ নিযুক্ত হন। ১৯৬৩ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। শ্রমিক আন্দোলনে তার অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব প্রদান এক গর্বের ইতিহাস। ১৯৬৪ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান শ্রমিক পরিষদের (ইস্ট পাকিস্তান ওয়ার্কার্স কাউন্সিল) সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ১৯৬৫ সালে পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ শ্রমিক সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব প্রদান করেন। ১৯৬৩-১৯৭০ সাল পর্যন্ত বহু শ্রমিক আন্দোলন, কৃষক আন্দোলন ও ঘেরাও আন্দোলনে তার নেতৃস্থানীয় ভূমিকা ছিল। ১৯৬৭-৬৯ তিনি দুবার ১৪ মাস কারারুদ্ধ থাকেন। ১৯৬৯ সালে তিনি বেসরকারি খাতে এক সংবাদ সংস্থা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন এবং ঢাকায় গড়ে ওঠা ইস্টার্ন নিউজ এজেন্সির (ENA) তিনি প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি ঢাকা টাইমসের সম্পাদক ছিলেন। তিনি ১৯৫৭ সালে স্থাপিত পাকিস্তান ইউনাইটেড ন্যাশানস অ্যাসোসিয়েশনের (ইস্ট জোন) প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ছিলেন। এ সংগঠনই পরে হয় ‘বাংলাদেশ-ইউনাইটেড ন্যাশানস অ্যাসোসিয়েশন’। ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। শ্রমিক ফেডারেশন ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কর্তৃক পরিচালিত ত্রিপুরার শ্রীনগর ক্যাম্পে অবস্থান নেন এবং যুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। আসামের রাজধানী শিলংয়ে বাংলাদেশ মিশনে অবস্থিত ‘লিবারেশন লিয়াজোঁ সি কমিটির’ সদস্য এবং কলকাতা সিপিআই (এম) অফিসে অবস্থিত বাংলাদেশ লিবারেশন কোঅর্ডিনেশন কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় মুক্তি সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির তিনি অন্যতম সদস্য ছিলেন। বাংলাদেশের প্রগতিশীল রাজনীতি ও শ্রমিক আন্দোলনের একজন অন্যতম সংগঠক ও নেতা ছিলেন সিরাজুল হোসেন খান। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধ- এ সময়ে সাংবাদিকতা, ট্রেড ইউনিয়ন ও জাতীয় রাজনীতি নিয়ে খুবই সক্রিয় ছিলেন তিনি। একজন আদর্শনিষ্ঠ ও প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ হিসেবে কখনো কৃষক আন্দোলন, কখনো শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের আন্দোলন ও জাতীয় রাজনীতির প্রতিটি সঙ্কটকালে সামনের কাতারে দেখা গেছে তাকে। সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা হিসেবে পাকিস্তানের সামরিক শাসক কর্তৃক জারিকৃত প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স অর্ডিন্যান্স বিরোধী আন্দোলনে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। শ্রমিক আন্দোলনে সিরাজুল হোসেন খানের অবদান অপরিসীম। ওয়াসা শ্রমিক ইউনিয়ন, টোব্যাকো শ্রমিক ইউনিয়ন এবং ১৯৬৪ সালে গঠিত চা শ্রমিক সঙ্ঘের তিনি উপদেষ্টা হিসেবে শ্রমিকদের বহু সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান করেন। পূর্ব পাকিস্তান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শ্রমিক আন্দোলনে তার সাহসী নেতৃত্ব ছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো ও ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরে গঠিত জাতীয় গণমুক্তি ইউনিয়নের (জাগমুই) তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যার সভাপতি ছিলেন বর্ষীয়ান জননেতা হাজী মোহাম্মদ দানেশ। পরবর্তী পর্যায়ে আরো বৃহত্তর গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তিগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘গণতান্ত্রিক পার্টি’র তিনি সভাপতি ছিলেন। ১৯৮২ সালে দেশে সামরিক শাসন জারি হলে বিএনপি, গণতান্ত্রিক পার্টি ও অন্য পাঁচটি দল নিয়ে গঠিত ৭ দলীয় ঐক্যজোটে এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ১৫ দলীয় জোটের যুগপৎ আন্দোলনে গণতান্ত্রিক পার্টি প্রধান হিসেবে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আন্দোলনের একপর্যায়ে বিএনপির একাংশ, ইউপিপি, গণতান্ত্রিক পার্টির সাথে এরশাদ সরকারের রাজনৈতিক সমঝোতা হলে গঠিত হয় ‘জাতীয় ফ্রন্ট’। জাতীয় ফ্রন্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৮৬ সালে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ গঠিত হয় এবং সামরিক আইন প্রত্যাহার হয়। ১৯৮৫ সালের ৩ জুলাই সিরাজুল হোসেন খান এরশাদ সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। এ যোগদানে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর মধ্যে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কিন্তু আশার কথা, মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েও তিনি একজন সৎ ও ন্যায়বান মন্ত্রী হিসেবে তার সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে সক্ষম হন এবং তার রাজনৈতিক দর্শন অনুযায়ী কিছু কিছু ভালো উদ্যোগ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করেন। জাতীয় ফ্রন্ট পরবর্তীকালে জাতীয় পার্টি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়ামের অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনি তথ্য, ভূমি, মৎস্য ও পশুসম্পদ, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে তিনি অত্যন্ত উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে কাজ করেন। মৎস্য মন্ত্রণালয়ে প্রাণ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন তিনি। তিনি বঙ্গোপসাগরে বিএফডিসি জাহাজ ‘অনুসন্ধানী’কে সমুদ্রে মৎস্য গবেষণার কাজে প্রেরণ করেন এবং গভীর সমুদ্রে মা চিংড়ি (Mother Shrimp) রিজার্ভের সন্ধান পাওয়া যায়। বঙ্গোপসাগর, নদী, পুকুর, বিল, হাওর, বাঁওড়ে মৎস্য চাষ বৃদ্ধিতে মৎস্য বিভাগকে সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে আগ্রহী করে তোলেন। ঝিমিয়ে পড়া মৎস্য মন্ত্রণালয় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পায়। জাল যার জলা তার’ জলমহালে জেলেদের অধিকার রক্ষায় ‘জাল যার জলা তার’ নীতি বাস্তবায়ন করেন। বাংলাদেশের মৎস্যজীবীদের তিনি ‘জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতি’তে ঐক্যবদ্ধ করেন। জলমহালের চারপাশে বসবাসরত জেলেরাই সংশ্লিষ্ট জলমহালে মৎস্য চাষ করবেন মর্মে তাদের মন্ত্রণালয়/মৎস্য অধিদফতর থেকে ‘অধিকার পত্র’ দেয়া হয় এবং ১৯৯০ সালে ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে মৎস্যজীবী সমাবেশে ‘জাল যার জলা তার’ নীতি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। এ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন মরহুম রাষ্ট্রপতি এরশাদ। পরবর্তীতে সুনামগঞ্জের মহাশিং নদী তীরে এক ঐতিহাসিক ‘জেলে মহাসমাবেশে’ রাষ্ট্রপতি এরশাদের উপস্থিতিতে ‘নদী তীরবর্তী জেলেদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘অধিকারপত্র’ বিতরণ করেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাসে এটি একটি ঐতিহাসিক ও ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা। শুধু তাই নয়, ‘জাল যার জলা তার’ নীতির আওতাধীন জলমহালগুলোতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করা হয় এবং মাছ রফতানিতেও বাংলাদেশ আরো অগ্রসর হয়। চিংড়ি চাষ উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি। কক্সবাজার জেলার চকরিয়া মৌজার গুটিকয়েক ব্যক্তি পরিবারের কাছে রক্ষিত চিংড়ি চাষের জমি শত শত ক্ষুদ্র চাষি ও মালিকদের কাছে হস্তান্তর করেন। ফারাক্কা লং মার্চে, ১৯৭৬ সালের ১৬ ও ১৭ মে গঙ্গার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে মওলানা ভাসানী ঘোষিত লং মার্চে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সিরাজুল হোসেন খান। লাখ লাখ শ্রমিক, কৃষক, ছাত্র ও জনতার মিছিলে রাজশাহীর মাদরাসা ময়দান থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে সবার সাথে পায়ে হেঁটে অংশ নেন এবং মওলানা ভাসানীর সাথে ফারাক্কা মিছিলে নেতৃত্ব দেন। ১৯৯৭ সালের মে মাসে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক স্বার্থ ও সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষার আন্দোলনে যে কয়জন নেতৃত্বের অগ্রভাগে ছিলেন সিরাজুল হোসেন খান তাদের অন্যতম। কিন্তু সাংবাদিকতার মোহের জগৎ তাকে বন্দী করে রাখতে পারেনি শুধুই লেখালেখির জগতে। তিনি এসে দাঁড়িয়েছিলেন কারখানার মেহনতি শ্রমিকদের পাশে, গড়ে তুলেছিলেন শ্রমিক আন্দোলন। তিনি বিভিন্ন আন্দোলন আর সংগ্রামকে দেখেছেন শ্রমিক, কৃষক, মেহনতি মানুষের মুক্তির অধিকার প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা থেকে। তাই জাতীয় মুক্তির জন্য স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণে তার কোনো দোদুল্যমানতা ছিল না। ভেবেছিলেন, দেশের স্বাধীনতার ফলে গণতান্ত্রিক সংগ্রামের বিজয় সূচিত হবে। জীবনে প্রাপ্তি ও পূর্ণতার মধ্যে দ্ব›দ্ব চিরদিনের হলেও, প্রত্যেকের ক্ষেত্রে তা একই রূপে আবির্ভূত হয় না। কারো কারো জীবন প্রাপ্তি ও পূর্ণতার এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে টিকে থাকে- মানুষ সে জীবনকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধায় আপ্লুত হয় এবং স্মরণের জগতে লালন করে। এমনই একজন মানুষ সিরাজুল হোসেন খান। সিরাজুল হোসেন খানের মৃত্যুর পর দীর্ঘ ১৬ বছর সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু যে জীবনকে তিনি রেখে গেছেন তার অসংখ্য গুণমুগ্ধ, ভক্ত আর অনুসারীদের কাছে, সে জীবনের মৃত্যু নেই। এ জীবন বেঁচে থাকে কালের যাত্রাপথে, মানুষের জীবনে আলোকবর্তিকা হিসেবে। শ্রমিক কৃষকের অকৃত্রিম বন্ধু জীবনের যে পরিচয় সিরাজুল হোসেন খান রেখে গেছেন তার ইতিহাস অনেক দীর্ঘ। পঞ্জিকার হিসেবে তা আট দশক ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু আট দশকের বেশি সময় বেঁচে থাকাটাই বড় পরিচয় নয়- তাঁর পরিচয় বহুমাত্রিক। প্রতিটি পরিচয়ে তিনি এক উজ্জ্বল মানুষ। সাংবাদিকতা, রাজনীতি, শ্রমিক আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ-কর্মের প্রায় সব ক্ষেত্রে বিচরণ ছিল এই মানুষটির। সর্বক্ষেত্রেই প্রায় সমুজ্জ্বল তাঁর উপস্থিতি। সংগ্রীহিত।