মহা প্রয়ানে সঙ্গীতের জ্যোতি জ্যোতির্ময় দাশ
জ্যোতির্ময় দাশ জন্মগ্রহণ করেন হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলার মোড়াকড়ি গ্রামে ১৯৪২ সালের ২রা সেপ্টেম্বর। পিতা প্রয়াত ধনঞ্জয় দাশ ও মাতা শ্রীমতি দেবযাণী দাশ। সাত ভাই তিন বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। ছোট বেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি ছিল তাঁর প্রবল আগ্রহ। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। জ্যোতির্ময় দাশ ও হবিগঞ্জের প্রখ্যাত ওস্তাদ মোঃ বাবর আলী খান (১৯১৬-১৯৮৫) একই গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। জ্যোতির্ময় দাশ ১৯৬১ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বি.এস.সি পাস করে কলকাতায় চলে যান এবং সেখানে গিয়ে কলকাতা মিউজিক কলেজ থেকে বি.মিউজ পাস করেন এবং সুদীর্ঘ ১০ বছর সঙ্গীত সাধনার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশে চলে আসেন। ১৯৭৫ ইংরেজীর ২৫ আগস্ট থেকে হবিগঞ্জে স্থায়ী ভাবে বসবাস শুরু করেন। হবিগঞ্জে এসে তিনি ওস্তাদ বাবর আলী খানের সান্নিধ্য লাভ করেন । ১৯৭৫-১৯৮৫ সন পর্যন্ত এই ১০ বছর ছিল হবিগঞ্জে সঙ্গীতের স্বর্ণযুগ। তিনি এই ১০ বছর সুরবিতান ললিতকলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সঙ্গীত প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি হবিগঞ্জ বি.কে.জি.সি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সঙ্গীত শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ বেতার সিলেট কেন্দ্রের নজরুল সঙ্গীত ও পল্লীগীতির নিয়মিত শিল্পী। তাঁর ছোট বোন ইন্দুপ্রভা দাশ একজন প্রতিভাবান শিল্পী। জ্যোতির্ময় দাশ ছিলেন হবিগঞ্জ তথা বৃহত্তর সিলেটের একজন প্রথম সারির কন্ঠশিল্পী ও সঙ্গীত প্রশিক্ষক। তিনি প্রধানত খেয়াল, ঠুংরী, তারানাসহ রাগপ্রধান ও নজরুলের রাগাশ্রিত গানই বেশি পরিবেশন করতেন। এ-কে কখনো এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয় । যদিও তাঁর বয়স হয়েছিল ৭২ বছর তথাপি হঠাৎ করে সবাইকে ছেড়ে না বলে, না কয়ে গত ২২ শে জুন ভোর রাত্রি ৩টা ১৫ মিনিটে ঢাকার ধানমন্ডি রেঁনেসা হাসপাতালে জীবন মঞ্চ থেকে সকল মান-অভিমান, আনন্দ-বেদনা, ক্ষোভ-দুঃখ সবকিছু ত্যাগ করে চলে যাবেন তিনি, তা যেন ভাবতেও অবাক লাগে।